৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায়

ওজন কমানো একটি চ্যালেঞ্জিং প্রক্রিয়া, কিন্তু সঠিক পদ্ধতি মেনে চললে ৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় জানা সম্ভব। কথায় আছে, “হালকা থাকো, সুস্থ থাকো, জীবনটাকে সুন্দর রাখো” অর্থাৎ, সুস্থ থাকার জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়, যেমন—হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ। তাই একটু ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভার, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা ও ক্যান্সারের ঝুঁকিও দেখা যায়। তাই সুস্থ থাকতে হলে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। উল্লেখিত পদ্ধতি আমরা দ্রুত ওজন কমানোর কিছু প্রাকৃতিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।

৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় সমূহঃ

১. লিকুইড ক্যালোরি খাওয়া কমিয়ে দেওয়া

২. ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া

৩. প্রক্রিয়া জাত খাবার বাদ দেওয়া

৪. নিয়মিত শরীরচর্চা করা

৫. পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়ার

৬. ফলমূল ও শাকসবজি বেশি খাওয়া

৭. রান্নায় স্বাস্থ্যকর তেলের ব্যবহার করা

৮. পরিমাণ মতো খাবার খাওয়া

১. লিকুইড ক্যালোরি খাওয়া কমিয়ে দেওয়া

লিকুইড ক্যালোরি হচ্ছে তরল পানীয়, যেমন—চা, কফি, বিভিন্ন জুস ইত্যাদি। লিকুইড ক্যালরিযুক্ত খাবার কমিয়ে দিতে হবে, কারণ এতে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি থাকলেও পেট ভরেনা। যেমন—হট চকলেট কফিতে ২০০ ক্যালোরি থাকে, যা খরচ করতে দুই কিলোমিটার বেশি দৌড়াতে হবে। কিন্তু আমরা যত সহজে ২০০ ক্যালোরি গ্রহণ করব, তা সহজে খরচ করব না। যার ফলে ওজন কমার পরিবর্তে বেড়ে যাবে। তাই ওজন কমাতে হলে লিকুইড ক্যালোরিযুক্ত খাবার কমিয়ে দিতে হবে।

২. ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া

ফাইবারযুক্ত খাবার শুধু ওজন কমাতে সাহায্য করে না, এটি হজম শক্তি বাড়ায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং শরীরের দুর্বলতা কাটাতে সহায়ক। ফাইবার খাবারের মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা শরীরে পুষ্টির অভাব পূরণ করে এবং দীর্ঘ সময় ক্ষুধা না লাগার মাধ্যমে অতিরিক্ত খাওয়া আটকায়।

উদাহরণস্বরূপ, লাল চাল একটি দারুণ ফাইবারযুক্ত খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। আপনি যদি লাল চাল খান, তবে দুপুরে খাবারের পর অনেকটা সময় পর্যন্ত ক্ষুধা লাগবে না, ফলে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা এড়ানো যাবে। এর পাশাপাশি, গোটা শস্য (যেমন—পামচিনি, সয়াবিন), সবুজ শাকসবজি (যেমন—ব্রকলি, পালং শাক), এবং ফলমূল (যেমন—আপেল, নাশপাতি) খাওয়া ফাইবারের চমৎকার উৎস। এসব খাবারের মাধ্যমে শরীরের বিপাকক্রিয়া বৃদ্ধি পায়, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।

এছাড়া, ফাইবারযুক্ত খাবারের আরেকটি সুবিধা হল, এগুলি হজম হতে সময় নেয়, ফলে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে দীর্ঘ সময় ধরে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে এবং শরীরের নানা ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। ফাইবারের পাশাপাশি, এগুলোর মধ্যে থাকা ভিটামিন এবং মিনারেল শরীরকে সঠিকভাবে কাজ করার জন্য উৎসাহিত করা। 

৩. প্রক্রিয়া জাত খাবার বাদ দেওয়া

প্রক্রিয়াজাত বা প্রসেসড খাবারগুলি তাড়াতাড়ি হজম হয়, কিন্তু এগুলোর মধ্যে ক্যালোরি পরিমাণ অনেক বেশি থাকে এবং পুষ্টিগুণ কম থাকে। প্রসেসড খাবারগুলোর মধ্যে যেমন—বার্গার, পিজ্জা, ফাস্ট ফুড, প্যাকেটজাত খাবার, মিষ্টি জাতীয় খাবার ইত্যাদি থাকে, যেগুলো খেলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমে যায় এবং ওজন বাড়াতে সহায়ক হয়। এই খাবারের মধ্যে অতিরিক্ত চিনি, তেল এবং সোডিয়াম থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।এই খাবারগুলো ওজন বাড়ায় এবং ৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় বাধা সৃষ্টি করে।

যেমন, প্যাকেটজাত নুডলস বা ফাস্ট ফুড খেলে আপনি যতটা খাচ্ছেন, তার থেকে অনেক বেশি ক্যালোরি এবং চর্বি শরীরে প্রবেশ করছে, যা দীর্ঘমেয়াদে আপনার শরীরের পক্ষে ভাল নয়। উপরন্তু, এই খাবারগুলো দ্রুত হজম হয়ে যায়, ফলে শরীরের অপ্রয়োজনীয় শক্তি জমা হয়ে গিয়ে সঞ্চিত চর্বিতে পরিণত হয়।

উপায়ঃ

তবে, এর পরিবর্তে ঘরে রান্না করা স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেলে আপনার শরীর পুষ্টিগুণ পাবে এবং এই খাবারের মধ্যে ক্যালোরির পরিমাণও কম থাকবে। উদাহরণস্বরূপ, ব্রাউন রাইস, সবুজ শাকসবজি, গ্রিলড মাংস বা সিদ্ধ মাছ ইত্যাদি খেলে আপনি পুষ্টিগুণ পাবেন এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি এড়িয়ে চলতে পারবেন।

এছাড়া, বাড়িতে তৈরি খাবারে আপনি নিজের পছন্দমতো উপাদান ব্যবহার করতে পারবেন, যেমন কম তেল, স্বাস্থ্যকর মসলার ব্যবহার, এবং অন্যান্য পরিশোধিত উপাদান বাদ দেওয়া।

৪. নিয়মিত শরীরচর্চা করা

ওজন কমাতে শরীরচর্চা করতেই হবে। এজন্য কার্ডিও বেছে নিন। পুরো শরীরের চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে কার্ডিও। নিয়মিত এই ব্যায়াম করলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও ফুসফুসের রোগের ঝুঁকি কমে। দৈনিক অন্তত ৩০-৪৫ মিনিট কার্ডিও করুন।

যা যা করবেন:

১. ওয়ার্ম-আপ: ১০ মিনিট

২. দ্রুত হাঁটা বা জগিং: ১০ মিনিট (৮ মাইল প্রতি ঘণ্টা)

৩. ক্রাঞ্চস: ৮টি, পুনরাবৃত্তি ৩ সেট

৪. সাইকেল ক্রাঞ্চস: ৮টি, পুনরাবৃত্তি ৩ সেট

৫. লেগ রেইসেস: ৮টি, পুনরাবৃত্তি ৩ সেট

নিয়মিত উপরে উল্লেখিত কার্ডিও গুলো করুন দ্রুত ওজন কমাতে।

৫. বেশি পরিমাণে ফল ও শাকসবজি খাওয়া

৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায়

শাকসবজি ও ফলমূলে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে, সাথে পুষ্টিগুণও থাকে, যার ফলে শাকসবজি বেশি খেলে পেট ভরা থাকবে এবং পুষ্টিও পাওয়া যাবে। তাই ওজন কমাতে বিভিন্ন রঙের শাকসবজি এবং ফলমূল খাওয়া উচিত, তবে রান্নার সময় তেলের পরিমাণ কম রাখতে হবে। সিদ্ধ করে খেতে পারলে দ্রুত ফল পাওয়া যাবে।

৬. রান্নায় স্বাস্থ্যকর তেলের ব্যবহার

সয়াবিন তেলের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহার করতে হবে, যেমন—অলিভ অয়েল, ক্যানোলা অয়েল। হার্ভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেলথ এর মতে, ক্যানোলা অয়েল স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো তেল গুলোর মধ্যে একটি। তাই ওজন কমাতে রান্নায় পরিমাণমতো স্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহার করা উচিত।

৭.পরিমাণ মতো খাবার খাওয়া

যতটা ক্যালোরি আমরা খরচ করি, ঠিক ততটাই ক্যালোরি গ্রহণ করা উচিত। তবে এর মানে এই নয় যে, আমরা খুব কম খাওয়ার চেষ্টা করব। সঠিক পরিমাণে খাবার খাওয়া, আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেশি খেলে শরীর অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ করে, যা ভুড়ি বা অতিরিক্ত চর্বির রূপে জমা হয়। আবার খুব কম খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর, কারণ এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং আপনি পর্যাপ্ত পুষ্টি না পেলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং ৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় বাধা সৃষ্টি করে।

উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার দৈনিক ক্যালোরির চাহিদা থাকে ২০০০ ক্যালোরি, তবে আপনি ২০০০ ক্যালোরি খাবার গ্রহণ করবেন। যদি আপনি তার চেয়ে বেশি খাওয়া শুরু করেন, তবে আপনার শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমা হতে শুরু করবে এবং ওজন বেড়ে যাবে। অন্যদিকে, যদি আপনি খুব কম খাওয়া শুরু করেন, তাহলে আপনার শরীরের শক্তি হ্রাস পাবে এবং আপনি অনুভব করবেন দুর্বলতা বা ক্লান্তি।

এজন্য, খাবারের পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ধারণ করা উচিত। যেমন, প্রতিদিনের খাবারের মধ্যে ফলশাকসবজি, গোটা শস্য, প্রোটিন (যেমন—মাছ, মুরগি, ডাল) ঠিক পরিমাণে রাখা উচিত। একইসাথে, রান্নার সময় তেল ও মসলার পরিমাণ কমানো এবং খাবারের প্রতি প্লেটের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।

এভাবে, সঠিক পরিমাণে খাবার খেলে আপনার শরীর সঠিকভাবে কাজ করবে এবং আপনি সহজেই ওজন কমাতে সক্ষম হবেন।

৮. পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়া

খাওয়ার আগে আধা লিটার পানি খেতে হবে, যার ফলে অল্প খাবারে পেট ভরে যাবে। অল্প খাওয়ার ফলে ক্যালোরি কম গ্রহণ হবে,  যা ৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় হিসেবে খুবই কার্যকর।

উপসংহার

এই সহজ ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে আপনি ৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় হিসেবে সফল হতে পারেন। তবে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও নিয়মিত শরীরচর্চাই দীর্ঘমেয়াদী সমাধান

৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় জানার পর এখনই শুরু করুন এবং ফিট থাকুন!

সাত দিনে মোটা হওয়ার উপায়
গ্যাস্ট্রিক থেকে পিঠে ব্যাথা
পানি শূন্যতা দূর করার উপায়
ঘামাচি হলে করণীয়
নাকের সর্দি কমানোর উপায়
স্থায়ী ফর্সা হওয়ার উপায়
৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *