শরীর সুস্থতা বজায় রাখতে পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পর্যাপ্ত পানি শরীরের জন্য অনেক উপকারী। অপর দিকে পানি শূন্যতার কারনে আমাদের শরীরে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। যেমন অনেক সময় গরম আবহাওয়া অতিরিক্ত ঘাম, পানির অভার বা অন্য কোনো অসুস্থতার কারণে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। পানি শূন্যতার কারণে মাথা ঘোরা, দুর্বল, ত্বক শুষ্ক হওয়ার মতো বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই পানি শূন্যতা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় উপায় সমূহ জানা প্রয়োজন। নিচে পানি শূন্যতা দূর করার উপায় সর্ম্পকে আলোচনা করা হলোঃ
পানিশূন্যতা কেন হয়:
পানি শূন্যতা দূর করার পূর্বে আমাদের জানতে হবে পানিশূন্যতা কেন হয় । সাধারণত পানি শূন্যতা ঘটে যখন শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় কমপানি গ্রহন করে অথবা বেশি পানি হারায়। তখন পানিশূন্যতা দেখা দেয়।
পানি শূন্যতার প্রধান কারণ হলো:
১। পর্যাপ্ত পানি না পান:
প্রতিনিয়ত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না পান করলে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পাবে।
২। অতিরিক্ত ঘাম:
অনেক সময় গরম অবহাওয়া, ব্যায়াম বা জ্বরের কারণে শরীরের থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়।
৩। ডায়রিয়া বা বমি:
দীর্ঘ সময় ধরে ডায়রিয়া বা বমি হলে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়।
৪। অতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়াঃ
যাদের ডায়াবেটিস ও কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে।
৫।অ্যালকোহল বা ক্যাফেইন যুক্ত পানীয় গ্রহণ:
এ সকাল অ্যালকোহল বা ক্যাফেইন শরীর থেকে পানি বের করে দেয়। ফলে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। এসকল পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে।
পানি শূন্যতা দূর করার উপায়:
১। পর্যাপ্ত পানি পান করা:
পানি শূন্যতা দূর করার জন্য প্রাথমিক ভাবে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে তা আমরা সবাই যানি কিন্তু তা জন্য অতিরিক্ত পানি গ্রহন করা যাবে না। গরম আবহাওয়া ও ব্যামের পরে ৮-১০ গ্লাস পানি গ্রহন করলে পানি শূন্যতা দূর হয়। সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পানি পান করা উপকারী
২। ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় পান না করাঃ
পানি শুন্যতা দূর করার জন্য ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় ব্যপক ভূমিকা পালন করে। ইলেকট্রোলাইট পানীয় যেমন: ওরস্যালাইন, লবন-চিনি মিশ্রিত পানি কিংবা নারকেলের পানি শরীরের জন্য উপকারী। লেবু ও মধু মিশ্রিত পানি শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৩। পানি যুক্ত খাবার খাওয়া:
পানি শূন্যতা দেখা দিলে পানি যুক্ত খাবার উপকারী যেমন: শসা, তরমুজ, কমলা, স্ট্রবেরি, দই ইত্যাদি খাবার পানির ঘারতি পূরণ করতে সহায়ক। এছাড়াও দুধ স্যুপ এবং স্মুদি পান করলেও শরীরে পানি শূন্যতা কমে ।
৪। ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল পরিহার করা:
অতিরিক্ত চা, কফি বা অ্যালকোহল, পানি শূন্যতাকে আরো বেশি বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই এই এই সকল পানীয় গ্রহন কমিয়ে দিলে পানি শূন্যতা দূর করা যেতে পারেন।
৫। নিয়োমিত অল্প পরিমাণে পানি পান করাঃ
এক সাথে বেশি পানি না খেয়ে সারা দিন অল্প অল্প করে পানি পান করতে হবে কেননা অতিরিক্ত পানি একবারে পান করলে তা শরীর থেকে দ্রুত বের হয়ে যায়।
৬. বিশেষ অবস্থায় সতর্ক থাকুনঃ
গরমে বাইরে বের হলে পানি সঙ্গে রাখুন এবং প্রয়োজন মতো পান করুন।জ্বর, ডায়রিয়া বা বমি হলে দ্রুত ওরস্যালাইন বা লবণ-চিনি মিশ্রিত পানি পান করুন।
এই পানি শূন্যতা দূর করার উপায় অনুসরণ করলে শরীর সুস্থ থাকবে এবং পানির অভাবজনিত সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যাবে।
ডিহাইড্রেশন হলে কী খেতে হবে?
ডিহাইড্রেশন হলে শরীরের পানিশূন্যতা পূরণে কিছু নির্দিষ্ট খাবার ও পানীয় গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রথমেই বিশুদ্ধ পানি ধীরে ধীরে পান করা উচিত। ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ ওরস্যালাইন, নারকেলের পানি ও ফলের রস পান করা কার্যকর। তরমুজ, শসা, কমলা, মাল্টা, স্ট্রবেরি ও আঙুরের মতো পানিযুক্ত ফল ও সবজি খেলে শরীর দ্রুত হাইড্রেট হয়। দই, স্যুপ ও ব্রথ শরীরের পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। খিচুড়ি ও ওটসের মতো হালকা খাবার খেতে হবে এবং মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। পাশাপাশি, চা, কফি ও অ্যালকোহল পরিহার করা উচিত, কারণ এগুলো পানিশূন্যতা বাড়াতে পারে। সঠিক খাবার ও পানীয় গ্রহণ করলে শরীর দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
বেশি পানি খেলে পানিশূন্যতা হয় কেন?

অতিরিক্ত পানি পান করলে শরীরের সোডিয়াম ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে, যা হাইপোন্যাট্রেমিয়া নামে পরিচিত। এতে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কমে যায়, ফলে কোষগুলো অতিরিক্ত পানি শোষণ করে ফুলে ওঠে। বিশেষ করে মস্তিষ্কের কোষ ফুলে গেলে মাথাব্যথা, বমি, দুর্বলতা, বিভ্রান্তি এমনকি গুরুতর ক্ষেত্রে খিঁচুনি বা কোমার মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত পানি কিডনির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে দেহের প্রয়োজনীয় লবণ ও মিনারেলগুলো ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে। তাই অতিরিক্ত পানি পান না করে শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পানি পান করাই স্বাস্থ্যকর।
পানি শূন্যতা দূর করার উপায় গুলো মেনে চললে সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব ।
পানিশূন্যতা বোঝার উপায়
পানিশূন্যতা বোঝার কিছু সাধারণ উপায়:
- তীব্র পিপাসা
- শুষ্ক মুখ ও জিহ্বা
- প্রস্রাব কম হওয়া বা গাঢ় হলুদ রং
- ক্লান্তি বা মাথাঘোরা
- চামড়া শুষ্ক ও নরমাল ইলাস্টিসিটি হারানো (চিমটি দিলে ধীরে ফিরে আসে)
- মাথাব্যথা বা খিটখিটে ভাব
গুরুতর ক্ষেত্রে চোখ ঢলা, বিভ্রান্তি বা অজ্ঞান হওয়া হতে পারে। দ্রুত পানি বা খাবার স্যালাইন পান করা প্রয়োজন।
ডিহাইড্রেশন চিকিৎসা
পানিশূন্যতা হলে প্রথমেই ORS বা লবণ-চিনির পানি খান। প্রচুর তরল (পানি, স্যুপ, ডাবের পানি) পান করুন। বিশ্রাম নিন, বিশেষ করে গরমে। বমি বা ডায়রিয়া থাকলে বারবার অল্প অল্প খান। তীব্র হলে (চোখ বসে গেলে, দুর্বলতা, প্রস্রাব কম) দ্রুত ডাক্তার দেখান বা শিরায় স্যালাইন নিন। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
শিশুর পানি শূন্যতায় করণীয়
শিশুর পানি শূন্যতা দেখা দিলে প্রথমে তাকে ধীরে ধীরে অল্প অল্প করে খাবার স্যালাইন বা সেদ্ধ পানি খাওয়ান। বুকের দুধ খাওয়ানো শিশু হলে বারবার বুকের দুধ দিন। ডায়রিয়া বা বমি হলে ওআরএস (ORS) দিতে থাকুন। শিশুর অবস্থা গুরুতর হলে (যেমন: খুব দুর্বলতা, চোখ গর্তে ঢুকে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া) অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। পানি শূন্যতা রোধে নিয়মিত তরল খাবার দিতে ভুলবেন না।
পানিশূন্যতা হলে কি হয়?
পানিশূন্যতা হলে শরীরে পানির অভাব দেখা দেয়, যা বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন: দুর্বলতা, মাথাব্যথা, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, প্রস্রাব কম হওয়া বা গাঢ় রং হওয়া, মাথা ঘোরা, এমনকি গুরুতর ক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। পর্যাপ্ত পানি ও তরল খেলে পানিশূন্যতা রোধ করা যায়।
ডিহাইড্রেশন কত প্রকার
ডিহাইড্রেশন মূলত তিন প্রকার:
১. হাইপোটোনিক ডিহাইড্রেশন – শরীরে পানির চেয়ে ইলেক্ট্রোলাইট (লবণ) বেশি কমে যায়।
২. আইসোটোনিক ডিহাইড্রেশন – পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট সমানভাবে কমে।
৩. হাইপারটোনিক ডিহাইড্রেশন – পানির তুলনায় ইলেক্ট্রোলাইট কমে যায় বেশি।
এগুলো সাধারণত অত্যধিক ঘাম, ডায়রিয়া বা বমির কারণে হতে পারে।
পানিশূন্যতা দূর করে কোন ফল?
পানিশূন্যতা দূর করতে তরমুজ, শসা, মাল্টা, আঙুর ও ডাবের পানি খুব কার্যকর। এগুলোতে প্রচুর পানি ও ইলেকট্রোলাইট থাকে, যা দ্রুত শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করে। বিশেষ করে গরমে বা ডায়রিয়ার পর এগুলো খাওয়া উপকারী।
পানির পিপাসা দূর করার উপায় কী?
পানির পিপাসা দূর করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো বিশুদ্ধ পানি পান করা। এছাড়া ডাবের পানি, লেবু-পানি, বা তরমুজের মতো জলীয় ফল খেলেও পিপাসা মেটে। গরমে ঠাণ্ডা পানি ও লবণ-চিনির শরবতও কার্যকর। পিপাসা পেলে কোমল পানীয় বা কফি এড়িয়ে চলাই ভালো।
ডিহাইড্রেশন হলে কি খেতে হবে?
ডিহাইড্রেশন হলে ওআরএস, ডাবের পানি ও লেবু-পানি পান করুন। তরমুজ, শসা, কমলা, দই, স্যুপ ও ফ্যানের মতো জলসমৃদ্ধ খাবার খান। লবণযুক্ত খাবার (সিদ্ধ ডিম, সেদ্ধ আলু) উপকারী। চা, কফি ও সফট ড্রিঙ্কস এড়িয়ে চলুন।
পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে কোনটির কারণে?
পানিশূন্যতা সাধারণত অতিরিক্ত ঘাম, জ্বর, ডায়রিয়া, বমি, পর্যাপ্ত পানি না পান করা, অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল গ্রহণ এবং দীর্ঘ সময় রোদের মধ্যে থাকার কারণে হতে পারে।