গরমের দিনে ঘামাচি একটি সাধারণ সমস্যা। এটি শিশু থেকে শুরু করে বড়দের সবারই হতে পারে। ঘামাচি হলে ত্বকে লাল দানা, চুলকানি এবং অস্বস্তি দেখা দেয়। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা ঘামাচি হলে করণীয় বা তার প্রতিরোধ করতে কার্যকরী উপায় জানতে চান । এই আর্টিকেলে আমরা “ঘামাচি হলে করণীয়” সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ঘামাচি বা মিলিয়ারিয়া ত্বকের ঘামের গ্রন্থিগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে হয়। যখন ঘাম ত্বকের নিচে আটকে যায়, তখন ত্বকে লাল দানা ও ফুসকুড়ি দেখা দেয়। এটি সাধারণত গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় বেশি হয়।
ঘামাচি হলে করণীয় কি?
১. ত্বক শীতল ও শুষ্ক রাখুন
ঠান্ডা পানির সেঁক: ঠান্ডা পানিতে কাপড় ভিজিয়ে ঘামাচির স্থানে সেঁক দিন। এটি জ্বালাপোড়া ও চুলকানি কমাবে।
গোসল: দিনে দুইবার ঠান্ডা পানিতে গোসল করুন। গরম পানি ব্যবহার করবেন না, কারণ এটি ত্বককে আরও শুষ্ক করে দিতে পারে।
শুষ্ক পরিবেশে থাকুন: ফ্যান বা এয়ার কন্ডিশনারের নিচে থাকুন যাতে শরীর ঠান্ডা ও শুষ্ক থাকে।
২. হালকা ও সুতির পোশাক পরুন
গরমে ঘামাচি প্রতিরোধ করতে হালকা, ঢিলেঢালা ও সুতির পোশাক পরুন। সুতির কাপড় ঘাম শুষে নেয় এবং ত্বক শুষ্ক রাখে।
টাইট বা সিনথেটিক কাপড় পরা এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো ঘাম আটকে রাখে।
৩. ঘামাচি পাউডার ব্যবহার করুন
ঘামাচি হলে করণীয় বা প্রতিরোধে ভালো মানের পাউডার ব্যবহার করুন। যেমন: ডেটল পাউডার, পিজ বটানি পাউডার বা নিভিয়া পাউডার।
পাউডার ব্যবহারের আগে ত্বক ভালোভাবে শুকিয়ে নিন।
৪. ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করুন
মুলতানি মাটি: মুলতানি মাটি পানির সাথে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে ঘামাচির স্থানে লাগান। এটি ত্বক ঠান্ডা রাখে এবং ঘামাচি কমায়।
নিম পাতা: নিম পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন। নিমের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ ঘামাচি কমাতে সাহায্য করে।
এলোভেরা জেল: এলোভেরা জেল ত্বক ঠান্ডা রাখে এবং ঘামাচি থেকে দ্রুত মুক্তি দেয়। এটি সরাসরি ত্বকে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
৫. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
শরীর hydrated রাখলে ঘামাচি হওয়ার সম্ভাবনা কমে। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
৬. ত্বক পরিষ্কার রাখুন
নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করুন যাতে ঘাম ও ময়লা জমে না থাকে।
মাইল্ড সাবান বা ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন এবং ত্বক ভালোভাবে শুকিয়ে নিন।
৭. চুলকানি এড়িয়ে চলুন
ঘামাচি হলে চুলকানো এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি ত্বকে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে।
চুলকানি কমাতে ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করতে পারেন।
৮. ডাক্তারের পরামর্শ নিন
যদি ঘামাচি তীব্র হয় বা সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেয় (যেমন: পুঁজ, জ্বর বা ত্বক ফুলে যাওয়া), তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ঘামাচি দূর করার ঘরোয়া উপায়
ঘামাচি দূর করার জন্য কিছু সহজ ঘরোয়া উপায় রয়েছে যা মেনে চললে ঘামাচি থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে । তা হলঃ :
1.ঠান্ডা পানির সেঁক: ঘামাচি হলে ঠান্ডা পানিতে কাপড় ভিজিয়ে ত্বকে সেঁক দিন। এটি চুলকানি ও জ্বালাপোড়া কমাবে।
2.মুলতানি মাটি: মুলতানি মাটি পানির সাথে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে ঘামাচির স্থানে লাগান। এটি ত্বক ঠান্ডা রাখে এবং ঘামাচি কমায়।
3.নিম পাতা: নিম পাতা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণসম্পন্ন। নিম পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন।
4.শসার রস: শসার রস ত্বক ঠান্ডা রাখে এবং ঘামাচি কমায়। শসা কেটে ঘামাচির স্থানে লাগান বা শসার রস ব্যবহার করুন।
গরমে ঘামাচি থেকে মুক্তির উপায়
গরমে ঘামাচি থেকে মুক্তি পেতে নিম্নলিখিত উপায়গুলো অনুসরণ করুন:
1.পর্যাপ্ত পানি পান করুন: শরীর hydrated রাখলে ঘামাচি হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
2.ঠান্ডা পরিবেশে থাকুন: যতটা সম্ভব ঠান্ডা ও শীতল পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন।
3. হালকা পোশাক পরুন: সুতির হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরুন।
4.নিয়মিত গোসল করুন: দিনে দুইবার গোসল করুন এবং ত্বক শুষ্ক রাখুন।
বাচ্চাদের ঘামাচি হলে করণীয় কি?

শিশুদের ত্বক খুবই সংবেদনশীল, তাই তাদের ঘামাচি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।অতিরিক্ত পোশাক, বদ্ধ স্থান এবং ঘাম শুষে নেওয়ার মতো উপাদানের অভাবও এই সমস্যাকে ত্বরান্বিত করে। সঠিক যত্ন ও পরিচর্যার মাধ্যমে বাচ্চাদের ঘামাচি প্রতিরোধ করা সম্ভব। বাচ্চাদের ঘামাচি হলে করণীয়:
1.হালকা ও সুতির পোশাক পরান: গরমে শিশুদের হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরান। সুতির কাপড় ঘাম শুষে নেয় এবং ত্বক শুষ্ক রাখে।]
2.নিয়মিত গোসল করান: ঠান্ডা পানিতে নিয়মিত গোসল করালে ত্বকের ঘাম ও ময়লা দূর হয়।
3.ত্বক শুষ্ক রাখুন: গোসলের পর ত্বক ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। ভেজা ত্বকে ঘামাচি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
4.বেবি পাউডার ব্যবহার করুন: ঘামাচি প্রতিরোধে বাচ্চাদের জন্য হালকা বেবি পাউডার ব্যবহার করুন। এটি ত্বক শুষ্ক রাখে এবং ঘামাচি কমায়।
বাচ্চাদের ঘামাচি দূর করার ঘরোয়া উপায়
শিশুদের ঘামাচি হলে করণীয় নিম্নলিখিত ঘরোয়া উপায়গুলো অনুসরণ করুন:
1.দই ও বেসনের প্যাক: দই ও বেসন মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে ত্বকে লাগান। এটি ঘামাচি কমায় এবং ত্বক ঠান্ডা রাখে।
2.গোলাপজল: গোলাপজলে তুলা ভিজিয়ে ঘামাচির স্থানে লাগান। এটি ত্বক শীতল করে এবং চুলকানি কমায়।
3.ঠান্ডা দুধ: ঠান্ডা দুধে তুলা ভিজিয়ে ত্বকে লাগালে ঘামাচি থেকে দ্রুত মুক্তি মেলে।
মুখে ঘামাচি মত হলে করণীয়
মুখে ঘামাচি হলে করণীয় :
1.পরিষ্কার রাখুন: মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার রাখুন। দিনে দুইবার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
2.ঠান্ডা পানির সেঁক: ঠান্ডা পানিতে কাপড় ভিজিয়ে মুখে সেঁক দিন।
3.এলোভেরা জেল: এলোভেরা জেল ত্বক ঠান্ডা রাখে এবং ঘামাচি কমায়। এটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
বড়দের ঘামাচি পাউডার কোনটা ভালো?
বড়দের জন্য ঘামাচি প্রতিরোধে ভালো মানের পাউডার ব্যবহার করা উচিত। কিছু জনপ্রিয় পাউডার হলো:
1.ডেটল পাউডার: এটি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে এবং ত্বক শুষ্ক রাখে।
2.পিজ বটানি পাউডার: এই পাউডার প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি এবং ঘামাচি প্রতিরোধে কার্যকরী।
3.নিভিয়া পাউডার: এটি ত্বককে শীতল ও সতেজ রাখে।
ঘামাচি হলে করণীয় গুলো মেনে চললে এর থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায় ।
উপসংহার
ঘামাচি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি খুবই অস্বস্তিকর। তবে সঠিক যত্ন ও ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করে ঘামাচি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। গরমের দিনে ত্বক পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখুন এবং উপরে উল্লিখিত উপায়গুলো অনুসরণ করুন। এতে আপনি ঘামাচি থেকে মুক্তি পাবেন এবং সুস্থ ত্বক বজায় রাখতে পারবেন।
মুখে ঘামাচি মত হলে করণীয়
মুখে ঘামাচি দেখা দিলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন, হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন, তৈলাক্ত ও ভারী প্রসাধনী এড়িয়ে চলুন এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ঘামাচি দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
ঘামাচি দূর করতে প্রাকৃতিক উপায়ের মধ্যে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল, বেকিং সোডা পেস্ট ব্যবহার, নিমপাতা বা অ্যালোভেরা জেল প্রয়োগ, এবং ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ঠান্ডা ও শুষ্ক পরিবেশে থাকুন।
ঘামাচি হলে করণীয়
ঘামাচি হলে হালকা সুতির পোশাক পরুন, ঠান্ডা ও শুষ্ক পরিবেশে থাকুন, প্রাণায়াম বা ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করুন এবং ত্বক পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখুন। প্রয়োজনে ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করুন।