দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম

দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম কীভাবে কাজ করে?

দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম মূলত অ্যান্টিফাঙ্গাল (ফাঙ্গাস-বিরোধী) উপাদান দিয়ে তৈরি, যা ত্বকের ফাঙ্গাল ইনফেকশন সরাসরি আক্রমণ করে। এই ক্রিমগুলি নিম্নলিখিত উপায়ে কাজ করে:

ফাঙ্গাস ধ্বংস করে– ক্রিমের সক্রিয় উপাদান (যেমন ক্লোট্রিমাজল, টারবিনাফিন) ফাঙ্গাসের কোষ প্রাচীর ভেঙে দেয়, ফলে এটি বাড়তে পারে না এবং ধীরে ধীরে মারা যায়।ফলে ফাঙ্গাস ধ্বংস হয় এবং দাদ দূর হয়। 

চুলকানি ও জ্বালাপোড়া কমায়- কিছু ক্রিমে হাইড্রোকর্টিসোন বা অন্যান্য উপাদান থাকে, যা প্রদাহ ও চুলকানি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে হাতের স্পর্শ কম হয় দাদ দূর হয়। 

সংক্রমণ ছড়ানো রোধ করে– ক্রিম লাগানোর পর ত্বকের আর্দ্রতা কমিয়ে ফাঙ্গাসের বিস্তার বন্ধ করে। ফলে সংক্রমণ ছড়ানো রোধ করে।

ত্বকের সুস্থতা ফিরিয়ে আনে– ক্রিমের ময়েশ্চারাইজিং উপাদান ত্বককে পুনরুদ্ধার করে, শুষ্কতা ও ফাটা ভাব দূর করে। যাতে ত্বকের সুস্থতা ফিরিয়ে আনে।

সঠিক নিয়মে দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম ব্যবহার করলে ১-২ সপ্তাহের মধ্যে উন্নতি দেখা যায়। তবে, সম্পূর্ণ সুস্থ হতে নিয়মিত প্রয়োগ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা জরুরি!

শরীরে দাদ কেন হয়?

দাদ ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যা যা দেখতে গোলাকার লালচে দাগের মতো হয়। এতে প্রচণ্ড চুলকানি হয় এবং ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আসুন জেনে নিই দাদ কেন হয় এবং কীভাবে মুক্তি পাবেন।

দাদ হওয়ার ৫টি সহজ কারণ

  • ছত্রাকের আক্রমণ: বিশেষ ধরনের ছত্রাক (ট্রাইকোফাইটন, মাইক্রোস্পোরাম) ত্বকে বাসা বাঁধলে দাদ হয়।
  • গরম ও ঘামা ত্বক: ঘামে ভেজা কাপড় পরলে বা শরীর শুকানো না হলে দাদ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
  • অন্যের কাছ থেকে ছড়ানো: দাদ আছে এমন মানুষ বা পশুর সংস্পর্শে এলে ছড়াতে পারে।
  • নোংরা পরিবেশ: ময়লা তোয়ালে, বিছানা বা কাপড় ব্যবহার করলে ঝুঁকি বাড়ে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে: ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো রোগ থাকলে দাদ সহজে হয়।

দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম

দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম

দাদের চিকিৎসার জন্য বাজারে বিভিন্ন অ্যান্টিফাঙ্গাল মলম পাওয়া যায়,নিচে দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিমের সবচেয়ে কার্যকর কিছু মলম হলো:

১. ক্লোট্রিমাজল ক্রিম (Clotrimazole Cream)

গুণাগুণ: শক্তিশালী অ্যান্টিফাঙ্গাল প্রভাব, দ্রুত চুলকানি ও লালচেভাব কমায়।

কখন ব্যবহার করবেন: সাধারণ দাদ ও ফাঙ্গাল ইনফেকশনের জন্য।

২. টারবিনাফিন ক্রিম (Terbinafine Cream)

গুণাগুণ: দ্রুত ফলাফল দেয়, ফাঙ্গাসের বৃদ্ধি রোধ করে।

কখন ব্যবহার করবেন: জেদি দাদ বা বারবার ফিরে আসা সংক্রমণের জন্য।

৩. মাইকোনাজোল ক্রিম (Miconazole Cream)

গুণাগুণ: চুলকানি ও ফাঙ্গাস নিয়ন্ত্রণে দ্রুত কাজ করে।

কখন ব্যবহার করবেন: শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের হালকা থেকে মাঝারি দাদের জন্য।

৪. কিটোকোনাজোল ক্রিম (Ketoconazole Cream)

গুণাগুণ: শক্তিশালী ফাঙ্গাস প্রতিরোধী, ত্বকের গভীর স্তরে কাজ করে।

কখন ব্যবহার করবেন: তীব্র দাদ বা স্ক্যাল্পের দাদের জন্য।

সেরা পছন্দঃ 

দ্রুত ফলাফলের জন্য: টারবিনাফিন

সাধারণ দাদের জন্য: ক্লোট্রিমাজল বা মাইকোনাজোল

জটিল সংক্রমণের জন্য: কিটোকোনাজোল

সতর্কতা: মলম ব্যবহারের আগে ত্বক পরিষ্কার করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, বিশেষ করে গর্ভবতী নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে।

দাদ চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায় ও প্রাকৃতিক সমাধান

দাদ বা রিংওয়ার্ম একটি ফাঙ্গাল ইনফেকশন যা ত্বকে চুলকানি, লাল দাগ ও অস্বস্তি সৃষ্টি করে। ওষুধের পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করে দাদ চুলকানি কমাতে পারেন। এখানে কিছু কার্যকরী প্রাকৃতিক পদ্ধতি দেওয়া হলো:

১. নারিকেল তেল

অ্যান্টিফাঙ্গাল ও ময়েশ্চারাইজিং গুণ রয়েছে।

আক্রান্ত স্থানে হালকা গরম নারিকেল তেল দিনে ২-৩ বার লাগান।

২. দই

দইয়ের ল্যাক্টোব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া ফাঙ্গাসের বৃদ্ধি রোধ করে।টকদই আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

৩. রসুন

অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে।রসুন বাটা বা রসুনের রস দাদে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে নিন।

৪. অ্যালোভেরা জেল

শীতল ও প্রদাহনাশক গুণ আছে, চুলকানি কমায়।তাজা অ্যালোভেরা জেল দিনে ২-৩ বার প্রয়োগ করুন।

৫. হলুদ ও নিম

হলুদের অ্যান্টিসেপটিক ও নিমের অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ দাদ সারাতে সাহায্য করে।হলুদ গুঁড়া ও নিমপাতার পেস্ট লাগিয়ে রাখুন শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।

সতর্কতা:

ঘরোয়া পদ্ধতি প্রয়োগের আগে ত্বক পরিষ্কার রাখুন।সমস্যা বাড়লে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

দাদ চুলকানি দূর করতে এই সহজ ও প্রাকৃতিক উপায়গুলো নিয়মিত ব্যবহার করুন এবং আরাম পান!

উপসংহার

দাদ চুলকানি একটি বিরক্তিকর সমস্যা, তবে সঠিক চিকিৎসা ও দাদ চুলকানি দূর করার ক্রিম ব্যবহার করে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে এবং উপযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করে আপনি দ্রুত এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

আপনার ত্বকের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন!

দাদ ভালো হতে কত সময় লাগে?

দাদ ভালো হতে সাধারণত ১-২ সপ্তাহ সময় লাগে। সঠিক পরিচর্যা, ওষুধ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মানলে দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব। সংক্রমণ বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

রানের চিপায় চুলকানি দূর করার ক্রিম?

রানের চিপায় চুলকানি দূর করতে ক্যালামিন লোশন বা হাইড্রোকর্টিসন ক্রিম ব্যবহার করুন। এছাড়া অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেটও সাহায্য করতে পারে। চুলকানি কমাতে ঠাণ্ডা পানির সেঁক দিন ও স্ক্র্যাচ করা এড়িয়ে চলুন। সমস্যা বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

দাদ হলে কি খাওয়া নিষেধ ?

দাদ হলে ঝাল, মসলাযুক্ত, টক ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন। এগুলো ত্বকের জ্বালা ও সংক্রমণ বাড়াতে পারে। পুষ্টিকর খাবার যেমন শাকসবজি, ফল, প্রোটিন ও পর্যাপ্ত পানি খান। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।

দাদ হলে কি সাবান ব্যবহার করা যায় ?

হ্যাঁ, দাদ (ফাঙ্গাল ইনফেকশন) হলে সাবান ব্যবহার করা যায়, তবে অ্যান্টিফাঙ্গাল সাবান বা মেডিকেটেড সাবান (যেমন: কেটোকোনাজল সাবান) ব্যবহার করা ভালো। সাধারণ সাবান দাদ কমাতে সাহায্য করলেও এটি পুরোপুরি সারাতে পারে না। ব্যবহারের পর ভালো করে পানি দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *